মাহমুদ হুজাইফার তিনটি গদ্য


প্রার্থনা

তুমি চাইলেই
আমি হায়েনা হয়ে ভালোবাসতে পারি মাটিকে, মৃত্যুকে, দুঃখকে। এতে হেরে যাবে সমূহ রাজনীতি। একটা পাখির মতো। গতরাতে যার কন্ঠ চেপে ধর্ষণ করেছে শুয়োরের কালো বাচ্চাটা। যে যার মতো ফিরে যাবে আর রয়ে যাবো আমি। হৃদয়কে তুলে দিবো থালা ভাঙা ফকিরের হাতে। এতে দেশ, রাষ্ট্র হুমড়ি খেয়ে পড়বে ইনসাফের পায়ে৷ আমরা হেঁটে যাবো পররাষ্ট্রের দিকে। এভাবে পৃথিবী।

তুমি চাইলে
তাক করা বন্ধুক— নল গুড়িয়ে দিবো শুকনো পাতার মতো। অবাক হবে আকাশ। বিস্মিত নক্ষত্রচূড়া। কে কোথায় কার ক্ষুধার্ত চোখে আঙুল ঠেসে বলছে প্রেম দে! বিনিময়ে তোকে দ্রোহ দিচ্ছি। আমাকে জানায়ো। আমাকে জানায়ো মৃত্যু ঘনীভূত হচ্ছে, এমন মূহুর্তে দুর্দান্ত শিয়াল কার কলিজা ছিঁড়ে মসজিদে দান করতে আসছে! এককেটা ঢেকুর মদের গেলাশ শেষ করে দিয়ে মসজিদকে বানাচ্ছে কাবার মিনার। এতে পাপ মুছে যেতে পারে। চরিত্রে আজীবন গন্ধ লেগে থাকবে। এতে ভুলে যেতে পারে তোমার অতীত একেকজন চতুর রাজনীতিবিদ। কিন্তু অপরিণামদর্শী কুকুর তোমার আঁচলের ঘ্রাণে বলে দিবে, কয়লা ধুইলেও ময়লা যায় না।

নমনিতার গল্প

পায়ের পাতা পেঁচানো রেললাইন। মাথা মুড়িয়ে আছে মেঘধোঁয়া আকাশ। সন্ধ্যা নেমেছে। জারুল গাছ পাতলা স্লোগান ছুড়ছে স্বগোতক্তিক বক্তৃতায়। আহা হৃদয়! দেয়াল খসে পড়ছে তোমার উঠোনে। গ্রাফিতি আঁকা জুলাই। শ্রাবণ, কণা, নাওয়াজের শহিদি নাম দ্রোহের বিনিময়ে এনে দিয়েছে স্বাধীনতা। সন্ধ্যা এসে গেছে। তোমার বুকের গন্ধ ডাকছে আমায়। ধলেশ্বরী নদীর মতো বহমান। কাদামাটির বালিশে প্রেমের সমাবেশ। কোমল। যেন হলুদ সূর্য শুয়ে আছে তোমার চোখে। আর হৃদয়ের আলিঙ্গনে তুমি ডাকছো আমায়— আয় আয় মনচোরা প্রেম নিয়ে যা!

পাথর পাতানো বিছানায় বসে তোমাকে জপছিলাম। পাশে রেলক্রসিং। কু চিক চিক স্রোতের বহর৷ পাতাঘেরা ছাউনি ঘেঁষে যে বাতাস উড়ছে ধুলোয়— আমাকে আজো শুনিয়ে গিয়েছে নমনিতার গান। আগুনে পোড়া পাতিল, দুর্ভিক্ষে জন্ম নেওয়া হাঁড়ি— আজ কতদিন ভাতের স্পর্শ জুটেনি কপালে। বেচারি গতর বেছেছে রাতের কাছে। সতিত্ব দিয়ানত রেখেছে করোতলি জমিদারের বিছানায়। তবু সন্ধ্যা— এক বিরবির মাতম তুলে ফিরে আসে এখানে। নমনিতার বুকে— ছাইগোলাপের পাপড়িতে। যেন সমস্ত হৃদয়— এক যৌনতার কাছে মহাপরাভূত। আর নেপথ্য খুঁজে দেখি— দুর্ভিক্ষ সমূহ যৌনতার জননী।

 ক্ষিধার নামতা শিখছিলাম। দুই দু গুণে চার হচ্ছে না কোনভাবে। কেবল একটা চাকার নিচে চারটা ভাতের জন্ম। তিনসন্ধ্যা ঘমের বিনিময়ে একপাতিল জোছনা।

চামড়া ফুঁসছে কড়াইয়ের মতো। ভাজা কেরোসিন কেউ ঢেলে দিয়েছে ক্ষিধের বিনিময়ে। চুল গলে খসে পড়ছে অলৌকিক যাতনায়। মাথার ভেতর চরকির মতো ঘুরছে যন্ত্রণা। এ খোদার অদ্ভুত শাস্তি — নাকি অপরাধ ভুলে যাওয়ার উপহার। আমার গা এসব সয়িফুল। এখন সময় থেমে গেলে মনে হয়—
এ রাষ্ট্র
ক্ষমতাচোষা হাত
বিষ দানবীর চোখ
ওষ্ঠাগত বিলবোর্ড
কাম জাদুঘর কবি
সব ধেয়ে আসছে প্রজাতির মতো। গর্তে পলাতক পিপীলিকার পায়ে। যেন পথ বাড়াতেই নদী আসছে। আর হরিণের ডানায় উড়ে উড়ে পড়ে যাচ্ছে সাপের মুখে৷ হিংসুটের ছোবলে।

  এর থেকে ছোট দুঃখ আমি শৈশবে পেয়েছিলাম। যখন পাপড়ির আদরে কলিজা জন্মাচ্ছিলো। নমনিতাকে ভালোবেসে গোলাপ দিয়েছিলাম রাস্তা কুড়িয়ে। আমি আর বেঁচে ফিরতে পারিনি কোনভাবে। না শরীর নিয়ে। আর না হৃদয়। হুশিয়ারী জনগণ টোকাই পেটাচ্ছিল নোংরা হয়ে যাওয়ার অজুহাতে। আর নমনিতা মুখের উপর লাত্থি মেরে বলেছিলো— আমি তাকে চিনি না।

ইঙ্গিতজ্ঞানী কুকুর

কেমন আছেন?

যেটুকু ভালো থাকা যায় — তারচে’ বেশি! এই ধরেন হরিণ, গতসন্ধ্যায় যার হৃদয় ভেঙে দিলো হরিনী। কিম্বা জলস্রোত, পাড় ভেঙে দিয়ে দেখে— এতটা তাড়াহুড়ো মৃত্যু চলে এলো৷ একটা রাত শিমুল তুলোর পিঠে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন প্রজাতির মিছিল লণ্ডভণ্ড পৃথিবীর শহর। কার ছায়া, কেমনতরো হেঁটে যাচ্ছে শামুক। পিটপিট। নীরব, চুপচাপ। মাস্তুলে বাতাস উড়ছে। শকুনের আনাগোনা দ্রুততর। আমরা পৃথিবীর নাম ধরে স্লোগান দিলে— পৃথিবীই বিরোধ হয়ে ওঠে। কে কার বোঝা চাপাবে এই শহরে। নগর, নক্ষত্র, স্টেশন — পাড়ার চা’মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা উলঙ্গ পাগল, প্রতিটা পাহাড়ের মতো ঘাড় তাক করে আছে মহাজনরা। বিদ্রোহীর চামড়া পুড়ে চপ্পল বানাচ্ছে রাজা। কাল মসনদে যে ভিখারির ছন্দ গেয়েছিলো— তাকেই তোমরা আজ বিদ্রোহী বলছো।

কেমন আছেন—

এইটুকু জানার পর মৃত্যু এতটাই কাছাকাছি, বৃষ্টি হচ্ছে। নক্ষত্র ধুয়ে ঝরে যাচ্ছে সন্ধ্যা। জাম্বুরির শেকড় বিছানো ছায়ায় ঘুমুতে আসছে মাছ, মৎস্য, মচ্ছব— যার যে ভাষায় সংগীত। কারো নামে আগুনকে বিক্রি করা যাচ্ছে না। কর্কশ — পাত্থরে হাড্ডি নিয়ে যে বিড়াল জন্মালো, আজ তার পরীক্ষা দিবস। পুড়িয়ে দিবে— কিন্তু ছাই হচ্ছে না৷ কি অদ্ভুত কি অদ্ভুত! তবে— ঈঙ্গিতজ্ঞানী কুকুরকে ডাকা হোক। মসজিদ, মন্দির, গির্জার পাথরগুলো যার সন্তান — এমন একজন পিতাকে ডাকা হলো। যার নাম ঈঙ্গিতজ্ঞানী কুকুর।

শেয়ার করুন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments