পূর্বকথা : কোন লেখাকে অসমাপ্ত তখন বলা যায় বোধ হয়, যখন সমাপ্ত হতে অল্প কিছু বাকি থাকে মাত্র। সে হিসেবে আমার এই ডায়রি কে অসমাপ্ত বলা সম্ভব না। কারণ, এটা আমি শুরুই করতে পারিনি, সমাপ্ত কীভাবে করব।
জুলাইর ঝাঁ ঝাঁ দিনগুলোতেআমার ছিলো আপন মতো এক টুকরো চিলেকোঠা। ক্লাসরুমের পেছনে, একটা সুন্দর ভেন্টিলেটরসহ ওই চিলেকোঠা ছিলো সকল সৃজনশীল কাজের আড্ডাখানা। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুম ছিলো এর মধ্যে প্রধান। ঘুমও কি সৃজনশীল কর্ম ? জানিনা। ব্যক্তিভেদে ঘুমও নানাদিক বিবেচনায় মহান হতে পারে। সে যাক। আমিও ঘুমাতাম। আবার তুমুল বৃষ্টির শব্দ এবং ভেন্টিলেটরের ফাঁক গলে লুটোপুটি করা রোদের সৌন্দর্যের ভেতর শিল্প-সাহিত্য করতাম। একটা বিপন্ন টেবিল ছিলো। মাদরাসায় যেমন থাকে আরকি। টেবিলে ল্যাপটপ রেখে গটাগট লিখতাম। বেশি হতো পিডিএফ পড়া। গুটি গুটি হরফের শরীরে ছিলো তখন অফুরান ভালবাসা, লালিত্য আর বালিকার হাসির মতো তীব্র দ্যোতনা। এরকম সময়ে জুলাই এসে দস্তক দেয় আমাদের দুয়ারে। জুলুম ও জাগরণের সকল হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয় নিমিষেই। শুরুতে জুলাই নিয়ে আমি আগ্রহী ছিলাম না। পটভূমিও ছিলো ভিন্ন। কিন্তু, আবু সাঈদের হত্যার পর থেকে আমি জেগে উঠি। বিদ্যুৎ বন্ধ থাকার দিনগুলোতে ওইটুকু চিলেকোঠায় বসে এ কয়েকটা দিনলিপি লিখি। লেখাগুলোতে জুলাইর কিছুই নাই। তারপরও ওই সময়ের কিছুটা গন্ধ তো লেগেই থাকবে। যদিও এর পরে তিন দিন আমি আন্দোলনে গিয়েছি। প্রথম দিন, পুলিশের ধাওয়া খেয়ে টিনের বেড়া পাড় হতে গিয়ে হাত কেটে ফেলি। চোখের সামনে কয়েকজনকে লুটিয়ে পড়তে দেখি মাটিতে। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে আরও কয়েকবার আন্দোলনে যাই। ওসব এখানে লেখা নাই। ৫ আগস্টের দিনের লেখাটা কিছুদিন আগে লিখি। শেষে এটাও সংযুক্ত করে দিয়েছি। তবে সতর্কতার জায়গা হলো, এই লেখায় তথ্য খুঁজে লাভ নাই। ভুল তথ্যও থাকতে পারে। এটা শুধু আমার একান্ত ডায়রি। এছাড়া আর কিছু না।
১৯ জুলাই ২০২৪/শুক্রবার
সাহিত্যকে আমি ছেড়ে যেতে পারছি না। বছরকয়েক এই সুগন্ধময় লোভাতুর জমিজমা চষে বেড়াবার পর আমার এখন বিপ্লবগন্ধী এই রোদ্দুরে বসে মনে হচ্ছে, কবিতা গল্প ও কলমের কারিকুরি ছেড়ে রাস্তার বিপ্লবী হয়ে যাই । কিন্তু, যখন ডিম,শুকনো মরিচ আর এক টুকরো লেবু দিয়ে উদরপূর্তি করে কাইলুলার জন্য শরীর ছেড়ে আল মাহমুদের কবিতার বই উল্টাই তখন মনে হয়— কবিতাই শ্রেষ্ঠ বিপ্লব। তখন কলম ও কিতাবের ঠান্ডা নিরীহ বিপ্লব আমার আকাঙ্ক্ষা হয়ে ওঠে। চিন্তাগত এই দ্বিচারিতা আমাকে সারাটা সময় এক ধরনের সংশয়পূর্ণ সময়ের ভেতর ফেলে রাখে।
চলছে চব্বিশের সবচে বিস্তৃত ও প্রভাবক এবং সাগ্রিকভাবে আশাব্যঞ্জক কোটাসংস্কার আন্দোলন। নির্দিষ্ট এক শ্রেণীর জন্য সরকারি চাকুরির প্রায় অর্ধেক কোটা বরাদ্ধের সংস্কারের দাবিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জমে ওঠা এই আন্দোলন এখন হয়ে উঠেছে আপামর,আঠারো বছর ধরে নিগৃহীত,বঞ্চিত গণমানুষের আন্দোলন। খুব অল্প সময়ে বিপ্লবের বারুদ হয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন।
আমি শুরুতে এটা নিয়ে খুব একটা সোচ্চার ছিলাম না। যেহেতু অভ্যস্তভাবে আমি রাজনীতিসচেতন মানুষ না,আবার সংবাদপত্র পাঠেও আলাদা আগ্রহ বা প্রয়োজন একটা দীর্ঘ সময় ধরে বোধ করি নাই, এজন্য এসব নিয়ে আমার ভাবনাও কম। তবে,নিউজনেস্টে ( অধুনা-স্থগিত একটি নিউজ পোর্টাল) কাজশুরু করার পর থেকে বাধ্যত আমাকে রাজনীতি ও নানামাত্রিক সংবাদের গলি-ঘুপচিতে প্রবলভাবে ঢুকে পড়তে হয়েছে। এবং তা জাতীয় প্রয়োজনে।
ছাত্রদের কোটাসংস্কার আন্দোলন বিষয়ে উদ্ধত শেখ হাসিনার বেফাঁস মন্তব্যে ছাত্রসমাজ তীব্রভাবে ফুঁসে উঠলে আর ঢাবির ক্যাম্পাস টান টান উত্তেজনায় কাঁপতে থাকলে আমি নড়েচড়ে বসি। এর আগে নিউজনেস্টে কোটা বিষয়ে কোন সংবাদই করা হয় নাই। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য জাতীয় সংবাদের মতো এড়িয়ে গেছি। কারণ নিউজনেস্ট এখনও পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিশেষত মুসলিমবিশ্বের সংবাদই কাভার করে। তাও আবার অনুবাদভিত্তিক।
এরপর মোটামুটি দিনমানের ব্যস্ততা হয়ে ওঠে চলমান আন্দোলনের সংবাদ কাভার করা। প্রায় চারদিন অর্থ্যাৎ ১৫ জুলাই থেকে ১৮ জুলাই ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পূর্ব পযন্ত অবিরত সংবাদ কাভার করা হয়েছে। এর উপকার হয়েছে বহুমাত্রিক। বিশেষত নিউজনেস্ট মাত্র দুমাসের মাথায় ১০০০+ সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা পূরণ করে ফেলে। বলা যায়, নিউজনেস্টে কাজ করার কল্যাণে চার পাঁচদিনের সব সংবাদ আমার নখদর্পণে ছিলো। কিন্তু নেট বন্ধ হয়ে গেলে বাধে বিপত্তি। পুরো দেশ অন্ধকারে ডুবে যায়।
আজ দু’দিন নেট বন্ধ। মোবাইল ডাটা ও ওয়াইফাই— দুটোই। কোথায় কী হচ্ছে, কিছুই নিশ্চিতভাবে জানা নাই। কিছু উড়ো খবর যদিও পাই,কিন্ত ভেতরের সাংবাদিক সত্তা বিরাজিত থাকার কারণে খুব সহজে বিশ্বাস হয় না। তবু এইটুকু বুঝি,দেশ বড়ো ক্রান্তিকাল পার করছে। এই আন্দোলন কোথায় গিয়ে ঠেকে,কে জানে!
২০ জুলাই ২০২৪/শনিবার
যা বলছিলাম এবং পর্যালোচনা করছিলাম,এটা-ই হচ্ছে মনে হয়। বিপ্লবী এই জাগরণ পথ হারিয়ে ফেলছে।ফেলছে বলছি কেন, ইতোমধ্যে ফেলেছে।কাল থেকেই ফোনকলের মাধ্যমে নানান প্রান্ত থেকে অবাধ অগ্নিসংযোগ,রক্তারক্তি এবং প্রশাসনিক সহিংসতার সংবাদ পাচ্ছি। আমার ধারণামতে গতকালই প্রায় ৮০ জনের মতো মানুষ নিহত হয়েছে। যদিও এর কোন সোর্স আমার কাছে নাই। কিন্তু, যোগ বিয়োগ মিলালে এবং প্রাপ্ত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে এই ধারণার সত্যতা আন্দায করা যাবে।
গতকাল মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জ, যাত্রাবাড়িসহ দেশজুড়ে ত্রিমুখী সহিংসতা ছিলো তুঙ্গে। আর বিভিন্ন স্পটে লাশও পড়েছে অসংখ্য। বিচ্ছিন্নভাবে অনেক সংবাদ এসেছে কানে। অধিকাংশই সত্য কিম্বা সত্যের কাছাকাছি ।
সকালে মামার কাছে শোনলাম,রাতে বিক্ষোভকারীরা শামীম ওসমানের মালিকানাধীন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ২৬ টি শীতল বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। পাশাপাশি একটি গার্মেন্সে আগুন দেয়ার সংবাদও শোনা গিয়েছে।
আবু বকর কল দিলো। আবু বকর বললে আর পরিচয় দেয়া লাগে না। আমার বুদ্ধি জাগার পর স্বপ্নশাসিত নানান কর্মচাঞ্চল্যে আবু বকরের উপস্থিতি ছিলো বিস্ময়কর। এখনও এবং তখনও। সেই যখন নিতান্ত ছোট পরিসরে চিরায়ত বেরুতো এবং এখন চিরায়তের ঝাঁ ঝাঁ তারুণ্যে— আবু বকর তার বিশ্বাস,কর্মনিষ্ঠা এবং নির্মোহ শ্রমের মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। কাল ওরে কল দিয়ে বলেছিলাম, কোন সংবাদ পেলে জানাতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক সরকারপক্ষের তিন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছে। সমন্বয়কত্রয় উক্ত বৈঠকে চলমান আন্দোলন বন্ধে আট দফা দাবি পেশ করেছেন। দাবিগুলো এতো সূক্ষ্ণ আর বিস্তৃত প্রকারান্তরে এগুলোকে সরকার পতনের দাবিই বলা চলে। তা সত্ত্বেও বৈঠকে উপস্থিত তিন মন্ত্রী দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। দাবিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন এবং আপাত অযৌক্তিক দুটো দাবি। সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওরফে কাউয়ার পদত্যাগ এবং সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। বাংলাদেশে বসবাস করা সচেতন প্রতিজন ব্যক্তি সহজেই বুঝবেন— অন্তত শেখ হাসিনার পক্ষে এই দাবিদুটো মেনে নেয়া কেন সম্ভব নয়। যাক সে কথা ।
আজ সারাদিন দেশ উত্তপ্ত ছিলো। হামলা পাল্টা হামলা হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। লাশ পড়েছে অসংখ্য । অ্যাটাক হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। কারফিউ চলছে।
২১ জুলাই ২০২৪/রোববার
আজ মামা ছয় সাতটার মতো দৈনিক পত্রিকা কিনে এনছেনে। সারাদিন এগুলো নিয়েই পড়ে থাকলাম। দৈনিক পত্রিকা পাঠের অভ্যাস আমার অল্প। ধারাবাহিক কখনো পত্রিকা পাঠ করা হয় নাই। কিন্তু আজকের সবগুলো পত্রিকাই মোটামুটি পড়ে ফেললাম। সংবাদের পাশাপাশি সম্পাদকীয়,উপসম্পাদকীয় এবং ফিচার— কিছুই বাদ যায়নি। আমার মনে হয় এতো গভীর অনুসন্ধিৎসা এবং মনোনিবেশ সহকারে দৈনিক পত্রিকা পড়া হয় নাই আর।
প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী গত চারদিনে প্রশাসনিক সহিংসতায় মারা গেছেন ১৪৮ জন। এটা প্রাথমিক এবং ঢাকার দুটো হাসপাতালের হিসাব। এর বাইরেও আরেও অনেক হিসেব রয়ে গেছে আড়ালে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকার কারণে বিচ্ছিন্ন সংবাদগুলোও পাওয়া যাচ্ছে না।
২২ জুলাই ২০২৪/সোমবার
আজকের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ আছে কিছু। দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। দেশজুড়ে কারফিউ জারি আছে । রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণের অর্থে বেড়ে ওঠা আত্মপরিচয়হীন বিক্রীত সেনাসদস্যরা সড়কে যেভাবে টহল দিচ্ছে, মনে হয় দেশে যুদ্ধ বেধেছে। এই সেনারা নির্বিঘ্নে জনসাধারণের উপর পাখির মতো গুলি চালাচ্ছে। তাদের উপর মানুষের যেটুকু আস্থা বাকি ছিলো— সেটাও এখন নেই। সরকারি বাহিনি বলতে মানুষ এখন নির্দয় হিংস্র একদল ছাগলের পাল বুঝে । যারা টাকার বিনিময়ে সব বিক্রি করে দিয়েছে। যাক সে কথা।
প্রথম আলো খোলস পাল্টিয়েছে। গতকাল কিছুটা,এবং আজ পুরোপুরি সরকারের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে বলা চলে। এইরকম কেন হচ্ছে,আমি জানি না। আজকের প্রথম আলোতে মতামনির্ভর কলামগুলো দারুণ লিখেছে। সবকিছুর জন্য সরাসরি সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। কোন রাখঢাক বা লুকোছাপা করা হয় নাই। দেখা যাক, কতদূর যায় এই পরিবর্তন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বপ্রধান সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনসহ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রথম আলো এই প্রতিবেদনের শিরোনাম দিয়েছে এভাবে,‘সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে নির্যাতন’। স্পষ্টত, খুব খোলাখুলি শিরোনাম। যেটা প্রথম আলোর সাহসিকতা বলতে হয়। এছাড়া, অন্যান্যরা শিরোনাম দিয়েছে বেশ লুকোচুরি করে। বলা যায় গা বাচিয়ে।
আজকের সবগুলো পত্রিকার লিড শিরোনাম ছিলো কোটা বিষয়ে আদালতের নতুন রায়। প্রায় সবগুলোই এই শিরোনাম দিয়েছে। এই শিরোনামেও প্রআ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।
গতকালসহ চলমান প্রশাসনিক সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৭৪ জন। রিপোর্ট প্রথম আলোর। অবশ্য, এটা একেবারে প্রাথমিক হিসাব। এর বাইরেও আরো অসংখ্য মৃত্যুর সংবাদ আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে।
আন্দোলনের গতিবিধি কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। বিশ্লেষণ করার মতো স্থিতিশীল পরিাস্থতি এখন আর আন্দোলনের নাই। শেখ হাসিনা নেট বন্ধ এবং কারফিউ জারি করে সম্ভাবনাময় এই আন্দোলনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখন জানি না,কোথায় গিয়ে থামে এই আন্দোলন। বাংলাদেশের জনগণ ইতিপূর্বে আর কোন আন্দোলনে এত আশাবাদী হয়নি,যা হয়েছে এই আন্দোলনে । কিন্তু,কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের অতি আবেগী আচরণ এর কবর রচনা করে ছেড়েছে। তবে,আন্দোলন শেষ হলেও এর বিবিধ প্রভাব বাকি থাকবে। এবং আরেকটি বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য মানুষকে সংগঠিত করবে।
তবে,আন্দোলন আবার চাঙা হওয়ার বিপুল সুযোগ এখনও বাকি আছে। সময়ও আছে। নেট চালু হলেই আন্দায করা যাবে।
•
দেবদাস পড়লাম। শরৎচন্দ্রের অন্য অনেক বই পড়লেও দেবদাস পড়া হয়নি আগে। আমার জানামতে,দেবদাস শরতের সর্বাধিক জনপ্রিয় বই। আগে যে কেন পড়লাম না,এই ভেবে আফসোস লাগছে। বইটা শেষ করে এতো খারাপ লাগলো বলে বুঝাতে পারব না। অনেকদিন পর কোন উপন্যাস পড়ে কাঁদতে মন চাইল । কাতর বোধ করলাম। উপন্যাস পড়ে দুঃখিত হওয়ার বয়স তো সেই কবেই পার হয়েছে। তবে আজ খারাপ লাগলো। ঝিম ধরে বসেছিলাম বেশ সময়। দেবদাসের জন্য মায়ায় মনটা ভিজে উঠল। আর পার্বতীর জন্য হৃদয়ের কোথাও যেন অভিমান গাঢ় হয়ে জমল। শ্রীকান্ত পড়েও আমার এতো ভালো লাগে নাই। অন্তত হৃদয়ে রোল উঠে নাই। দোল জাগে নাই।
দেবদাস পড়ে আমার কার কথা যেন মনে পড়তে লাগল। এমন,যে খুব উচ্চারণ করে ব্যাপারটা বলা যাবে না। হৃদয়ে এঁকে রেখে যাপন করতে হবে এই দুঃখ কিবা হাহাকার। কাল একজনকে দুষ্টুমি করে বলছিলাম,জীবনভর তো প্রত্যাখানই করলাম,এবার একটু প্রত্যাখাত হই। বলেই হেসে ফেললাম হা হা করে। আমাদের এই আটপৌরে জীবন—দিনকার বাঁধাধরা ব্যস্ততা ব্যতীত আর কিছুই নাই যেন। দিনশেষে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে মুখোমুখি বসিবার কোন বনলতা সেনও থাকে না। বাগানের সদ্যফোটা তীব্র তারুণ্যময় গোলাপটা কারুর হাতে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবারও কি কেউ আছে? মাঝে মাঝে এইরকম সময়ে হৃদয়ে মেঘ জমা হয়,স্মৃতির বালিহাঁস পাখা ঝাঁপটায়—আর কল্পনার কবর খোঁড়ে জেগে উঠে কারো কাতর হাতছানি। প্রশ্রয়ের বা প্রণয়ের।
বাইরে বৃষ্টি। নামছে আকাশ বেয়ে ধীরে, ভালোবাসার মতো । এক টুকরো মধুর চুম্বনের মতো। দেয়ালের ওপাশে সহপাঠিরা ঘুমিয়ে আছে। ভোরের পবিত্র কোমল সময়। বৃষ্টি এবং ভোর দুটো একসাথ হলে— আমার খুব আহলাদ জাগে। বাড়তি উদ্যম বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে আমার শরীর স্পর্শ করে। আজ অবশ্য সোমবার নয়, মঙ্গলবারের সকাল। গতকালের তারিখের ঘরে বসে আজকে লিখছি। রাত হওয়ায়,লেখাটা শেষ করতে পারিনি। অথবা শেষ করে ফেলেছি। কিন্ত,দেবদাসের স্মৃতিপোড়া গল্প আমার মানস থেকে মুছে যায়নি,তাই কী ভেবে যেন আজ লিখতে বসলাম। লেখা আর বাড়াবো ন। কাজের লেখা আছে। বাচ্চাদের মতো রোজনামচা লিখলে তো চলবে না।
২২ জুলাই ২০২৪/মঙ্গলবার
মনটা ভালো না । অদ্ভুত অনুভূতি অর্থহীন মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায় মাঝে মাঝে। কোথায় যে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে,বুঝতে পারি না। আবার চাইলেও তো ছেড়ে যেতে পারি না সকল সম্পর্ক ও সংঘর্ষ। আটকে যেতে হয় স্বপ্নের সাথে। অথবা দুঃস্বপ্নের সাথে। যথারীতি আজও দৈনিক পত্রিকার কথা আওড়াবো কিনা, ভাবছি। যদিও বিশেষ সংবাদ বলে কিছুই নাই। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৮৭ জন। আর সারাদেশে অবাধ ধরপাকড়,ছাত্রলীগের লুটপাট,অজ্ঞাতনামা মামলাসহ চলছে নৈরাজ্যের নানা আয়োজন। কিছু বলবার কোন শক্তিই বাকি রাখেনি স্বৈরাচার। সবার মুখ বাধা। প্রতিবাদের সবচেয়ে সরব প্লাটফর্ম সোশ্যাল নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এতো অন্ধকার সময় আর আসেনি।
আজ নেট খুলে দেয়ার কথা। প্রথম আলো জানিয়েছে,ব্রডব্যান্ডর লাইন আজ খুলে দেবে। কিছুক্ষণ আগে ওয়াইফাই একটু উঁকি দিলো। কিন্তু,নিতান্ত স্লো। ঠেলেও তাকে চালানো যাচ্ছে না। কাল পর্যন্ত দেখা যাক। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে।
২২ জুলাই ২০২৪/বুধবার
না,নেট চালু করেনি স্বৈরাচার। রাতে টেস্টিং চলছিলো বোধহয়। আজ প্রথম আলো বলছে,সরকারি স্থাপনা,শিল্পকারখানাসহ ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোতে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। সাধারণ জনগণ নেট থেকে অনেক দূরে । কারফিউ এবং ক্র্যাকডাউনের কারণে দেশে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। সরকারি বেসরকারি অগণিত খাতে দেশ হারাচ্ছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিশাল অংশ। প্রতিদিন পত্রিকায় এসব পড়ছি আর একজন অক্ষম দর্শকের মতো হাঁপিয়ে উঠছি শুধু। এছাড়া কি আমাদের আর কিছু করার নেই—মাঝে মাঝে এটা ভেবে খুব সংকোচিত হয়ে যাই ভেতরে ভেতরে। একটা চাপা কান্না এসে আটকে চোখে।
গতকালের নয়া দিগন্তে একটা লজ্জাজনক সংবাদ পড়লাম। আমি জাস্ট থ হয়ে গেলাম। ভাবতে খুব কষ্ট হলো,আমাদের অধঃপতন কত দূর এগোলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলেমদের একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাতে গিয়েছেন জাতির এই নাজুক সময়ে। আমি নামগুলো বলছি না। আলেমবিদ্বেষী বলে পরিবারে আমার একটা কুখ্যাতি আছে। সবসময় এই ভয়াবহ খ্যাতির সঙ্গে আমার লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। আম্মুর সাথে তো নিয়মিত কথা বাজে। কিন্তু,আমি কিভাবে বুঝাবো,আমি কেন দিন দিন আলেম নামের এসব কলঙ্কের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে উঠছি। আমি কখনোই বুঝাতে পারবো না।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে প্রশাসনিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৯ । সংবাদ নয়া দিগন্তের । সারাদেশে ৬১০০ মানুষকে আসামী করা হয়েছে। বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
৩০ জুলাই ২০২৪/মঙ্গলবার
মাঝখানে কয়েকদিন লেখা হলো না। লেখার ইচ্ছে জাগেনি,তা নয়। কিন্তু,সময় করে উঠতে পারিনি। তাছাড়া,মনটাও কয়দিন যাবত উড়ু উড়ু। কোথায় গিয়ে যে ঘুরে আসে,জানতেও পারি না। একসময়,যখন প্রথমবর্ষের সে স্বপ্নগ্রস্ত সময় যাপন করেছি,তখন খুব নিয়ম করে যত্ন করে ডায়রি লিখতাম। এই ব্যাপারটাকে আমি তীব্রভাবে ভালোবসে ফেলি। যতটুকু মনে পড়ে,প্রথম বর্ষে একদিনও আমি ডায়রি লেখা বাদ দেইনি। যেদিন লিখবার সময় পাইনি,অন্তত সেদিনের তারিখটা টুকে রেখেছি। কিন্তু এরপর ধীরে এই নিয়মতান্ত্রিকত কমে আসে। ব্যস্ততা বাড়ে। বয়সে পরিণতি ও পরিহাস আসন পেতে থাকে। ডাইরি উল্টানোও বন্ধ করে দিই একসময়। লেখা হয় না,পড়াও কম।
এখন তো আমি ডায়রি লিখি না। এখানে ডায়রি কই। কলম কই। কম্পিউটারের আলোকিত স্ক্রিনে আহত বাংলাদেশের ছবি আঁকি। সময়ের ইতিহাসকে মহাকালের ক্যানভাসে আঁকবার চেষ্টা করি। সাদা কোমল কাগজের ডায়েরি লেখার সেই শিশুতোষ নিরপরাধ ইচ্ছে কবেই মরে গেছে,কে রাখে এর খবর।
আজ সারদিন ছিলো লাল কাপড়ের প্রতীকি আন্দোলন। প্রত্যেককেই লাল কাপড়ে চোখ-মুখ বেঁধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট দিয়েছে। ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে ফেলা হয়েছে। গতকাল ছিলো দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল। অবশ্য প্রশাসনিক সহিংসতায় বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ থাকেনি। পুলিশের লাঠিপেটা ও ধাওয়া কার্যক্রম বরাবরের মতোই পরিস্থিতিকে যুদ্ধের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এই শান্তিপূ্র্ণ মিছিল থেকেও শতাধিক শিক্ষার্থিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরশু দেশজুড়ে গ্রাফিতি বা দেয়াললিখন কর্মসূচি ছিলো। সীমিত পরিসরে এই প্রতীকি কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবাদের চিরতরুণ ভাষা। এতেই ঘাবড়ে গেলেন ! আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হবো। আমাদের দমায়া রাখতে পারবানা।
পরশু রাত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের উপস্থিতিতে ডিবির হারুন চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারবিষয়ক জোরপূর্বক একটি ভিডিও বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। উক্ত ভিডিওতে অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসালামকে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় একটি স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি পড়তে দেখা যায়। উল্লেখ্য,এরপূর্বে নিরাপত্তার অজুহাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম,আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। পরদিন আরও ৩ জনকে একই অজুহাতে তুলে নেয়া হয়।
আন্দোলন প্রত্যাহারের এই ঘোষণা ছড়িয়ে পড়লে বাইরে থাকা অন্যান্য সমন্বয়করা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। পরদিন থেকে শুরু হয় নতুন কর্মসূচি। অবশ্য,এ পর্যায়ে এসে অধিকাংশ কর্মসূচিই প্রতীকি হয়ে পড়েছে।
আন্দোলন এখন কী পর্যায়ে আছে ? এর উত্তর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মতো দেয়া সম্ভব না। আগেই বলেছি ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন এবং কারফিউ জারির মাধ্যমে সরকার আন্দোলনকে দমানোর পথে অনেকদূর এগিয়েছে। অন্তত, শুরুকার সেই বিক্ষুব্ধ গণবিস্ফোরণ এখন প্রকাশিতভাবে সামনে নেই। মানুষ জমানো ক্ষোভকে আরও দ্বিগুণ করে ঘরে ফিরে গেছে। খুব সহজে এই আন্দোলন থামবে না। হয়তো এটার বিস্ফোরিত কোন রূপ সবার সামনে থাকবে না। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন পর্যন্ত ধিকিধিকি অঙ্গারের মতো জ্বলতে থাকবে। এবং একদিন ঠিকই আবার বিস্ফোরণ ঘটবে। ছড়িয়ে পড়বে আনাচে কানাচে।
৫ আগস্ট ২০২৪/ সোমবার
৫ আগস্টের দুপুর বেলার দৃশ্য। আমরা ছয়জন নারায়ণগঞ্জ থেকে শাহবাগে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হই। পোস্তগোলা হয়ে দয়াগঞ্জ যাই রিকশা হয়ে। দয়াগঞ্জ থেকে হেঁটে সামনের একটা মোড় । ওখান থেকে আমরা তিনটা রিকশা ভাড়া করি চানখারপুল পর্যন্ত। রিকশা প্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়া রাখে।
রোড ছিলো থমথমে। আশপাশে দলবেঁধে যাওয়ার মত লোকজন ছিল না বলতে গেলে। যার কারণে রিকশা তিনটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে।
প্রথম দুইটা রিকশায় করে আমরা কোন বাঁধা ছাড়াই চানখারপুল মোড় পর্যন্ত পৌঁছে যাই। ওখানে গিয়ে মোড়ে ধীরে ধীরে লোকজন জমায়েত হওয়া শুরু করে। আমরা শাহবাগে যেতে চেয়েও পারিনি। কারণ, এদিকে তখন থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেড ছু্ড়ছিল পুলিশ বিজিবি। এরপর এখান থেকে প্রায় ৩ টা বাজে আমরা বিশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগের উদ্দেশ্য বের হই।
এদিকে, আমাদের ২ টা রিকশা পৌঁছাতে পারলেও ৩ য় টা পৌঁছাতে পারে নাই। আমরা দুশ্চিন্তায় উপর্যুপরি ফোন করতে থাকি। কল যায়, রিসিভ হয় না। আমাদের হার্টবিট বাড়তে থাকে।
৩ য় রিকশায় ছিল, আতাউল্লাহ আর মেরাজ— আমাদের দুই ক্লাসমেট৷ পরে তারা বলে, মাঝপথে আওয়ামি গুন্ডারা রিকশা থামিয়ে তাদের আটকে দেয়।
: কই যাও ?
উত্তরে আতাউল্লাহ বলে, ‘সামনে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি।’
কিন্তু, রিকশার ড্রাইভার বলে দেয়, ওরা আন্দোলনে যাচ্ছে।
এটা শুনে আতাউল্লাহকে থাপ্পর মারা শুরু করে নেতা গোছের লোকটা। ভেতরে নিয়ে যায় দুজনকে। ভেতরে বলতে, কোন চিপা গলির ভেতরে। এদিকে রিকশার ভাড়া দেয়ার নাম করে মেরাজের পকেটে হাত দিয়ে ৫০০ টাকা নিয়ে যায় ওদের একজন।
ভেতরে নিয়ে ব্যাগ চেক করে। ব্যাগে গামছা, পেস্ট, পানি, বায়োডিন ও ব্যান্ডেজ পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মেরাজের গ্যালারি চেক করে জুলাইর ছবি পেয়ে চেপে ধরে ওর কলার৷ টেলিগ্রাম আছে কিনা দেখে। ভেতরে নিয়েও চড় থাপ্পড় মারে।
প্রায় এক ঘন্টা আটকে রাখে ওদের। ওদের সাথে আরও কয়েকজন ছিলো। নেতা টাইপের লোকটা ওদের বয়ান দেয়, শেখ হাসিনা হুজুরদের জন্য কী কী করেছে। স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশে এত পরিমাণ মসজিদ বানিয়েছে, যা কোন নবি-রসুলও বানায়নি।’ এসব বয়ান মারে ওদের। প্রায় এক ঘন্ট পর ‘আর আন্দোলনে না যাওয়ার ওয়াদা করিয়ে ছেড়ে দেয় ওদের’। তবে, ব্যাগে থাকা ফাস্ট এইড রেখে দেয়। ওরা ফিরতি পথে নারায়ণগঞ্জ মাদরাসায় ফিরে আসে।
এদিকে আমরা চারজন, আমি, শাহাদাত, মিজান, পারভেজ শাহবাগে সবার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিলে চিৎকার করতে থাকি। ২০ টাকা দিয়ে আমরা দেশের পতাকা কিনি। কপালে বাধি। আমরাও দেশকে ভালোবাসি৷
বিজয়ের সংবাদ শোনার পর শাহবাগ ছেড়ে বঙ্গভবন। বিজয় দেখি। হাঁটতে হাঁটতে আনন্দ দেখি। এরপর বঙ্গভবন থেকে হেঁটে শনি আখড়া পৌঁছে যাই। এরপর নারায়ণগঞ্জ। মাদরাসায়। জীবনে এই প্রথম ঢাকায় এত দীর্ঘ পথ হাঁটি।
অন্য সবার মত দুপুরের খাবারও খেতে পারিনি সেদিন। মোড়ের এক দোকান থেকে বনরুটি কিনে একটা মসজিদে বসে খেয়ে নিই।
মাদরাসায় আমাদের প্রিয় উসতাদ মুফতি ইমদাদ সাহেব মিষ্টির আয়োজন করেন। আনন্দে আমরা মিষ্টি খেয়ে বিজয় উদযাপন করি।
জুলাই এরকমই ছিলো আমাদের। আরও অনেক গল্প আছে। অনেক দিনের গল্প। বলতে ইচ্ছে করে না। কারণ, দুদিন পরপর কারা যেন আমাদের জুলাইর শরিকানা থেকে নাই করে দিতে চায়, যেভাবে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা করে এসেছে এবং করে চলেছে। অনেকে অধিকার চাইলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে হুমকি দিয়ে বলে,’আমাদের থেকে নাকি ওনি হাত গুটিয়ে নেবেন’।
জুলাই কি আমাদের ছিল না?