আবু বকর চৌধুরীর তিনটি কবিতা

জৈষ্ঠ্যকাদাঁর প্রেম

জীবনের যে বেলাটুকু অবশিষ্ট,
বেদনার হাতে সঁপে দিলাম—
ম্যারম্যারে সকাল,
তাপদাহে পুড়ে যাওয়া দুপুর,
একটি কুসুমরাঙা বিকেল।

সবই দিলাম, সবই দিলাম।

বেওয়ারিশ দুঃখবোধ,
পয়সায় কেনা কৃত্রিম বসন্ত,
গ্রীষ্মের জৈষ্ঠ্য কাঁদায় মাখামাখি প্রেম—

সবই দিলাম, সবই দিলাম।

রূহের শরাব

বিষাদের বেলা ঘনিয়ে এলে
সকাল ফুরায়—
হাসপাতালের বেড
যমদূতের মতো দাঁত খিঁচিয়ে হাসে।

জ্বালায়।
পোড়ায়।
ভাবায়—
এই বুঝি মৃত্যুদূত
গিলে ফেলছে রূহের শরাব!

দেয়ালে দেয়ালে
মৃত আত্মার প্রতিবিম্ব,
চোখ বুজলেই
লাশের মিছিল।

লাশের চেহারায় ভেসে ওঠে
প্রিয়জনের মুখচ্ছবি—
কান্নারাও কেমন
বোবা হয়ে যায়।

আমার কোনো দুঃখ নাই

এই নিশুতিরাতে,
ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে যখন ঠোঁট ছোঁয়াই—
দু’টাকা এনামের লোভে নিশিকন্যার আলগা পিরিতের কথা মনে পড়ে যায়।

রিকশাওয়ালার সোনালি বিড়ির ধোঁয়া
যেমন ভুতুড়ে গন্ধ ছড়িয়ে উবে যায় হাওয়ায়,
আমার দুঃখগুলোও নাই হয়ে যায়
অশরীরী আত্মার মতো।

আমলনামায় খুঁজতে থাকি—
আদৌ কি আমার দুঃখ বলে কিছু ছিলো (!?)

আমার কোনো দুঃখ নাই—

পিরিয়ডের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ,
পয়সাওয়ালা কুত্তার চকচকে গ্লাসে
মদ ঢালতে হয় না,
বেলুন দুর্ঘটনায় জন্ম নেওয়া
কোনো অজাতের বিছানাতেও
নিখুঁত হাসি দিয়ে গলা জড়িয়ে শুতে হয় না।

কিসের এতো দুঃখ আমার (!?)

ডাস্টবিনে পড়ে থাকা
পিতৃপরিচয়হীন বেওয়ারিশ লাশ তো নই,
দোপাট্টা ফেলে বক্ষঃস্থলের গ্রন্থির দাপটে
পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি কেড়ে খেতে হয় না।

তাহলে, ছিঁচকাঁদুনে ঢঙির মতো
কিসের এতো দুঃখ (!?)

আমার কোনো দুঃখ নাই—

ছাব্বিশ। দশ। তেইশ।

শেয়ার করুন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments