বৈচিত্রময়

শেষ রাতে সড়ক বাতির নিচে ঘুমিয়ে থাকে বেওয়ারিশ রাস্তা। ঘুমন্ত রাস্তার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে অপার্থিব ভুবণ মনে হয় চারপাশকে। যেন চার মাত্রার অন্ধকারে আটকে আছি আমি। ভোরের বাতাসে ভেসে আসে মৃত্যুর পবিত্র ঘ্রাণ। অদূরে ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আজরাইল আমার অপেক্ষায়। একটিমাত্র অন্ধকার চাদরের দূরত্ব আমাদের। অপেক্ষার ক্লান্তিতে ভারী হয়ে আসছে চোখের পাতা। চোখের কোটরে বাসা বাঁধছে মাকড়সার দল।

মাঝে মাঝে আমার খুব নিঃসঙ্গ লাগে। যেমন নিঃসঙ্গ লাগে অপরিচিত শহরে কোলাহলের ভিড়ে। চারপাশে কত শত মানুষ, অথচ কেউ আমার নয় আমিও কারো নই। আমায় ঘিরে জীবনের সমুদ্র বহমান, অথচ ওষ্ঠাগত প্রাণে আমি চাতক হয়ে তাকিয়ে আছি এক ফোঁটা জীবন সঞ্জীবনী সুধার অপেক্ষায়। তপ্ত দুপুরের লু হাওয়া হু হু করে বয়ে যায় আমার বুকের জমিনে। কিংবা আমি কোথাও নেই তোমাদের শহরে। হ্যারিপটারের অদৃশ্য পোষাকে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছি। সত্যি বলতে পালিয়ে মুক্তি চেয়েছি জীবন-যাপনের যন্ত্রণা থেকে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে জীবনের শৃঙ্খল আর যাপনের দায়িত্বের ভরে। এখন এই দেখো কেমন মুক্ত প্রাণ হয়ে হেটে যাই জীবনের অলি-গলি বেয়ে। আমার চারপাশ জুড়ে যান্ত্রিক মানুষের ব্যস্ত ছুটে চলা। অভাবে স্বভাব নষ্ট কিংবা মতলবী সাধুর গোপন লিপ্সা। নিষিদ্ধ সুখ আর তথাকথিত এলিটদের নোংরা অন্দরমহল আমার দৃষ্টির সামনে উলঙ্গ এখন।

কি বিশ্রী রকমের সুন্দর এই পৃথিবী। বৈচিত্রময় মুখশের ছড়াছড়ি সবখানে। অথবা পুরো অবনীকে একটা থিয়েটারও ভাবতে পারো। প্রতিটি সদস্য তার এক এক জন মস্ত অভিনেতা। তুমি, আমি, আমরা -নিত্য এখানে অভিনয় করে যাচ্ছি। প্রচন্ড শোকের ভেতর সুখী হওয়ার অভিনয় কিংবা ভীষণ কান্না লুকাই কর্পোরেট হাসির আড়ালে। আবার কখনো মিষ্টি কথার ভাঁজে সযত্নে আড়াল করি শোণিত-ঘ্রাণ।

আজ আমার একটা টিনের চশমা চাই। বহুরূপের ধাঁধায় চোখ ঝলসে গেছে আমার। মেকি আলোর শহরে একজন অন্ধ হয়ে বাঁচতে চাই আমি। আলোর শহর বড্ড অপছন্দ। তাই অন্ধকারের পেটের মধ্যে লুকিয়ে পড়তে চাই আমি। যেমনিভাবে মাতৃ-জঠরে নিরাপদে শুয়ে থাকে অনগত শিশু।

শেয়ার করুন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments