জুলাইর অসমাপ্ত ডায়রি

পূর্বকথা :  কোন লেখাকে অসমাপ্ত তখন বলা যায় বোধ হয়, যখন সমাপ্ত হতে অল্প কিছু বাকি থাকে মাত্র। সে হিসেবে আমার এই ডায়রি কে অসমাপ্ত বলা সম্ভব না। কারণ, এটা আমি শুরুই করতে পারিনি, সমাপ্ত কীভাবে করব। জুলাইর ঝাঁ ঝাঁ দিনগুলোতেআমার ছিলো আপন মতো এক টুকরো চিলেকোঠা। ক্লাসরুমের পেছনে, একটা সুন্দর ভেন্টিলেটরসহ ওই চিলেকোঠা ছিলো […]

সবাই চলে যায়

নানী যেদিন মারা গেলেন, সেদিন কোথাও ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল। কাঠফাটা রোদের ভেতরও আমার জানালা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকছিল। আমি বন্ধুদের আসরে বলতাম, কোথাও ঝড়-বাদল হলে হিমেল বাতাস শুষ্কভূমিতে ঝড়ের বার্তা পৌঁছে দিয়ে আসে। নানীর ইনতেকালের দিন এই অভিজ্ঞতা আমার আরো পোক্ত হয়েছিল। জানাযা-দাফনে শামিল হওয়ার জন্য আমরা রওনা করেছিলাম রাতের গাড়িতে। রাত তখন দ্বিপ্রহর। আমার […]

আবু বকর চৌধুরীর তিনটি কবিতা

জৈষ্ঠ্যকাদাঁর প্রেম জীবনের যে বেলাটুকু অবশিষ্ট,বেদনার হাতে সঁপে দিলাম—ম্যারম্যারে সকাল,তাপদাহে পুড়ে যাওয়া দুপুর,একটি কুসুমরাঙা বিকেল। সবই দিলাম, সবই দিলাম। বেওয়ারিশ দুঃখবোধ,পয়সায় কেনা কৃত্রিম বসন্ত,গ্রীষ্মের জৈষ্ঠ্য কাঁদায় মাখামাখি প্রেম— সবই দিলাম, সবই দিলাম। রূহের শরাব বিষাদের বেলা ঘনিয়ে এলেসকাল ফুরায়—হাসপাতালের বেডযমদূতের মতো দাঁত খিঁচিয়ে হাসে। জ্বালায়।পোড়ায়।ভাবায়—এই বুঝি মৃত্যুদূতগিলে ফেলছে রূহের শরাব! দেয়ালে দেয়ালেমৃত আত্মার প্রতিবিম্ব,চোখ বুজলেইলাশের […]

জিসান মেহবুবের দুটি ছড়া

ব্যবসা উঠবে লাটে পেঁয়াজ না এলে না-খেয়ে মরবো দাদাতাকিয়ে রয়েছি কখন পাঠাবে আদা!আলুর জন্যে হাহুতাশ পড়ে গেছেকরুণায় বুঝি আমরা রয়েছি বেঁচে‍! পাঠাবে না, খাও‍। হুমকি ধমকি কেনভাবসাবে দেখি মাগনা পাঠাও যেন!রপ্তানি ছাড়া কীভাবে চলবে ভাবোটাকা হলে ঠিকই বিকল্প সব পাবো‍। আমরা চলছি পণ্য আসেনি তবুনিজেদের কেন ভাবছো হুদাই প্রভু!বেচতে না পেরে বিক্ষোভ করে চাষাসামলাও ঘর। […]

হাসান মাহমুদের দুটি কবিতা

লাল জুলাইয়ের শোকস্মৃতি একটা মৃত্যু উপত্যকা থেকে হাসছে বাংলাদেশ—মীর মুগ্ধ মানুষকে মুগ্ধতার সাগরে ভাসিয়েচলে গেছে মুক্তির মহকালে। আবু সাঈদও তাই—বুক চিতিয়ে মানুষের চোখে মুখে জাগিয়েছেবিস্ময়। সামিত পড়ার টেবিলে রেখে গেছে জ্ঞানের দীপ্তি।পাশবিকতার আঁচড়ে মানুষ যখন হাঁসফাঁসকরছিল;ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল নেমে ছিলমুক্তির পয়গাম নিয়ে বিশ্বাসের মিছিলে। হুর তুমি পদ্মরাগ তুমি সৌন্দর্যের স্বীকৃত প্রবাল।মোতির গাঁথুনিতে যে তাঁবু সেথায় […]

বৈচিত্রময়

শেষ রাতে সড়ক বাতির নিচে ঘুমিয়ে থাকে বেওয়ারিশ রাস্তা। ঘুমন্ত রাস্তার বুকের উপর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে অপার্থিব ভুবণ মনে হয় চারপাশকে। যেন চার মাত্রার অন্ধকারে আটকে আছি আমি। ভোরের বাতাসে ভেসে আসে মৃত্যুর পবিত্র ঘ্রাণ। অদূরে ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোর নিচে দাঁড়িয়ে আজরাইল আমার অপেক্ষায়। একটিমাত্র অন্ধকার চাদরের দূরত্ব আমাদের। অপেক্ষার ক্লান্তিতে ভারী হয়ে আসছে […]

মাহমুদ হুজাইফার তিনটি গদ্য

১প্রার্থনা তুমি চাইলেইআমি হায়েনা হয়ে ভালোবাসতে পারি মাটিকে, মৃত্যুকে, দুঃখকে। এতে হেরে যাবে সমূহ রাজনীতি। একটা পাখির মতো। গতরাতে যার কন্ঠ চেপে ধর্ষণ করেছে শুয়োরের কালো বাচ্চাটা। যে যার মতো ফিরে যাবে আর রয়ে যাবো আমি। হৃদয়কে তুলে দিবো থালা ভাঙা ফকিরের হাতে। এতে দেশ, রাষ্ট্র হুমড়ি খেয়ে পড়বে ইনসাফের পায়ে৷ আমরা হেঁটে যাবো পররাষ্ট্রের […]

নীলাদ্রি; নিসর্গের আয়নাঘরে

শরতের এক মধ্য দুপুর। নীরব শান্ত কেমন উদাসী সেই দিনটার কি নাম ছিল বুধবার? ভরদুপুরে বিছানায় গড় খাচ্ছি। চারপাশ জুড়ে নিঃসঙ্গ শূন্যতা অঝোরে ঝরে পড়ছে। আমি সেই নিস্তব্ধ শীতলতার মখমল আবেশে বুদ হয়ে আছি। ভাবছি, পরীক্ষা উপলক্ষে গত কয়টা দিন কি ধকলটাই না গেল উপর দিয়ে। ঠিক তখনই পিনপতন নীরবতার অরণ্য ফুড়ে চির পরিচিত শব্দটা […]

যেখানে মেঘালয়ের হাতছানি

ইবতিদায়ে সফর১১ই অক্টোবরমঙ্গলবার সিলেটগামী পথটা সৌন্দর্যে মনোহর, সবুজে সবুজে ছাওয়া। ট্রেনে এই নিয়ে দ্বিতীয় দফা উঠেছি। ঠকঠক শব্দে আর দুল দুলোনিতে বেশ আনন্দ লাগছে। খুব যে, তা না। খানিকটা অস্বস্তিও হয়েছে বৈকি কিন্তু এক দারুণ অনুভূতির ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি গন্তব্যে। সন্তর্পনে। সময়টা বর্ষার। আকাশ জুড়ে দলা পাকা মেঘদল। ঝিরঝিরি বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা দূর আকাশে ধীরে […]

খাকি চত্বরের খোয়ারি:সেফটিপিন, স্যাডল আর স্মৃতির সার্কাস

কোনোএক বৃহস্পতির রৌদ্রজ্বল দুপুরে নাস্তা সারতে গিয়ে নয়া ঝকঝকা একটা সেফটিপিন খুঁজে পেলাম আমি। টিফিনটাইম শেষে সবিনায় (হেফজোখানায় বৃহস্পতিবারের জন্য নির্ধারিত পড়াশোনা) বসে আশপাশে সংবাদ ছড়ালাম ‘প্রেমিকার সেফটিপিন’ বলে। বললাম—এবার যখন বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি তখন দিয়েছে এটা। কী এক হুলুস্থুল পড়ে গেল আমাদের গ্রুপের ভিতর। কাড়াকাড়ি করে সেফটিপিনটা যখন সালমানের হাতে, শিক্ষক সামনে হাজির। […]

কয়েকটি তুলনামূলক অসম্ভব

দুপুর হলেই আমি নৌকায় চড়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকি। গগণফাটা রোদের প্রতি আমার কি এক মোহাব্বত কাজ করে। আমার তলে পৃথিবী দোলায়মান৷ নদীর জল কখনো বৃহৎ পরিসর নিয়ে ধীরে ধীরে বৃত্তাকার ঘোরে, কখনো উঁচা-নিচা হতে হতে সমান্তরাল বয়ে যায়। পানিগুলা যে আকার ও গতিতে নড়ে নীলখটকটে আকাশও সেভাবে নড়ে, সমান্তরাল বা গোলাকার। কতদিন ধরে দুপুরবেলা […]