হাসান মাহমুদের দুটি কবিতা

লাল জুলাইয়ের শোকস্মৃতি

একটা মৃত্যু উপত্যকা থেকে হাসছে বাংলাদেশ—
মীর মুগ্ধ মানুষকে মুগ্ধতার সাগরে ভাসিয়ে
চলে গেছে মুক্তির মহকালে।

আবু সাঈদও তাই—
বুক চিতিয়ে মানুষের চোখে মুখে জাগিয়েছে
বিস্ময়।

সামিত পড়ার টেবিলে রেখে গেছে জ্ঞানের দীপ্তি।
পাশবিকতার আঁচড়ে মানুষ যখন হাঁসফাঁস
করছিল;
ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল নেমে ছিল
মুক্তির পয়গাম নিয়ে বিশ্বাসের মিছিলে।

হুর

তুমি পদ্মরাগ তুমি সৌন্দর্যের স্বীকৃত প্রবাল।
মোতির গাঁথুনিতে যে তাঁবু সেথায় তোমার
আবাসন—

যে বৃক্ষের ছায়ায় একশো বছর সওয়ারি হয়েও
উৎরাতে পারব না বৃক্ষছায়াকে; কী সুন্দর হবে
সেই সজীবতা হে চিরসবুজ!

তুমি আছো নন্দিত আবরণে রক্ষিত মোতির মতো,
তুমি আছো এমন উদ্যানে; যেখানে আছে কাঁটাবিহীন কুলবৃক্ষ, আছে সমস্ত ফলের সমাহার!

তুমি আছো সেখানটায়, যেখানে কোনো কিছু নিষিদ্ধ নয়!

চিরকুমারী, কামিনী তুমি থাকবে সেজে সমুন্নত শয্যায়—
তোমার পাশ ঘিরে বয়ে যাবে প্রবাহিত পানি;
এমন মিঠা পানি আর নেই যে কোথাও!

এমনও সৌন্দর্যে নন্দিত আছো তুমি; যে চক্ষু
আজও দেখেনি তোমায়—

কোনো কান শোনেনি তোমার মধুর গান!

তোমার সৌন্দর্যের নন্দন কত সুন্দর হবে
কোনো ধারণা জন্মেনি আজও কারো মনে—

তোমার অবয়ব পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল
কিবা আরও প্রোজ্জ্বল!

তোমায় নিয়ে বেড়াব নহরে নহরে; দুধের নহরে
সাঁতরে যাব মধুর নহর ছুঁতে—
শরাবের নহরে শরাবের পেয়ালে হাতে
গাইব মহীয়ানের চিরন্তন গান।

যে শরাবে থাকবে না মৌতাত এই শরাব পান
করব দুজনে মিলে!

তোমার শরীরের শ্বেতবিন্দু ঘাম মেশকের মতো সুগন্ধিতে ছুঁয়ে যাবে আমার হৃদয়—
তোমার অধিক সৌন্দর্যে মাংস ভেদ করে হাড়ের ভেতরের মজ্জা দেখা যাবে;
আমরা তখন একমনে একপ্রাণে কাটিয়ে দেব
অনন্ত জীবন।

তোমার বাসনকোসন হবে সোনা ও রূপার—
সেই সোনা-রূপার থালায় আমায় খেতে দেবে!
তোমার চিরুনি হবে স্বর্ণের, আংটি হবে
মুক্তার, সমস্ত সৌন্দর্যে চিকচিক করবে
সেসমস্ত তোমার ব্যবহৃত অলংকার।

চিকন, পুরু রেশমি কাপড় পরে মুখোমুখি হবে
আমার!
আবরিত মোতির মতো থাকবে তুমি রক্ষিতা।
তোমার রূপরঙ চারবর্ণে করবে চিরসুন্দর—
তোমার নন্দিত রঙ সাদা, হলদে, সবুজ ও লাল।
তোমার রূপ ও রঙ অথৈ মাধুকরী—
তোমার দেহে আছে জাফরান, মৃগনাভি, আম্বর,
আছে কাফুর!

তোমার লবঙ্গের কেশ অথৈ ঘ্রাণ ছড়াবে আমার মনে—
আমার বুকে আর তোমারও তাই, স্বাক্ষর থাকবে মহামহিমের নাম;
থাকবে লেখা তোমার আমার নাম!

সমস্ত আনন্দের পর থাকবে তোমার আমার হাতে দশটি করে স্বর্ণের কাঁকন—
আরও থাকবে চরণে চরণে জহরতের নূপুর।

শেয়ার করুন

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments