চিরায়ত

ফিলিস্তিন নিয়ে চার কবির চারটি কবিতা

আমি বলে দিব পৃথিবীকে

মূল : সামিহ আল কাসিম

আমি বলব, বলে দিব পৃথিবীকে

তাদের কথা, যারা ভেঙেছে আমার ঘরের বাতি

নগ্ন কুড়াল হাতে খুন করেছে আমার কোমল পদ্ম

আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে যারা আমার বিনুনি-করা চুল।

আমি বলব আমার ছাগলছানাকে

বলব মায়ের বানানো রুটির খামিরাকে

ঘাস বিছানো নরোম মাটিকে বলব

বলব গোটা পৃথিবীকে, বলব একথা

ওগো ভুলোমনা পড়শীর মেয়ে

আমার পুতুল আমার কাছেই ভালো থাকে

ওই পুতুল আমার

তুমি বরং ফেরত দাও আমার জিনিস

পশ্চিমের নির্মল বাতাসে

হান্না, তোমার কাছে কোনো ওয়াদার কথা মনে নেই

কিন্তু খুব ভালো করেই মনে আছে

আমার ছোট্ট হৃদয়ে তোমার পায়ে হেঁটে আসার শব্দ

উদ্ভ্রান্ত আর ঠুকরে-খাওয়া পাখির মতো

আমরাই তো আমাদের মতো ভালো ছিলাম গো

ওগো পড়শীর মেয়ে, ওগো হান্না

তবু কেন আমাদের চোখে বেদনাবিধুর অশ্রু

আমরা কি নই আমাদের জন্য ভালো?

তবে কেন আমাদের হাত বাঁধা অভিশপ্ত রজ্জুতে?

আমি বলব, বলে দিব পৃথিবীকে

তাদের কথা, যারা ভেঙেছে আমার ঘরের বাতি

নগ্ন কুড়াল হাতে খুন করেছে আমার কোমল পদ্ম

আগুন পুড়িয়ে দিয়েছে যারা আমার বিনুনি-করা চুল।

——————

পবিত্র ভূমি

মূল : সালিহ গাওদাত

শবে মিরাজে ঊর্ধ্বলোকে যাবার মসজিদে

নির্মল পবিত্র জেরুসালেমে

আমি শুনতে পাই মা মরিয়মের বিষাদী সুর

ছুটে ছুটে প্রতিটি প্রান্তরে

খোদার দরগাহে জালিম থেকে চাইছে পরিত্রান

আমি দেখেছি যে-মাটিতে পড়েছিল

আহমদের (স) কদম মোবারক

তা ভস্মীভূত করেছে দুশমনের আগুন।

আমি পাথরগুলোকে দেখেছি দুঃখে মুহ্যমান

শুনেছি ওদের আহাজারি—

‘হায় জেরুসালেম, হায় আগ্রাসী!’

আলোময় প্রভাত ও নিচ্ছিদ্র রাত্রির কসম,

কসম মিরাজ পরিভ্রমণকারীর—

যার বদৌলতে পেয়েছি সত্য পথে হেদায়েত।

কসম খোদার, উদিত হবে না কোনো সূর্য

জালিমের কালো আসমানে

গৌরব আর ইনসাফের চাদরে শোভিত হয়ে

শীঘ্রই এ মাটি ফিরে পাবে তার প্রকৃত জনগণ

আর রুকু ও সিজদারতদের বুকে আঁকা

আল আকসাও ফিরে পাবে তার প্রভুর শরণ

অচিরেই ঝলমলিয়ে উঠবে সূর্য তাদের মাঝে—

এক স্রষ্টা ছাড়া যারা নতজানু হয় না কখনোই

——————

অদৃশ্যজন

মূল : রাশিদ হুসেইন

ঈশ্বর স্বয়ং শরনার্থী যখন, হে প্রভু

তো এবার বাজেয়াপ্ত করে ফেলুন

আপনাকে সেজদার সব গালিচা আর জায়নামাজ

বেচে দিন তাহলে গির্জেগুলো তার সব

স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিসহ

আর পাচার করে দিন মুয়াজ্জিনদের কালোবাজারে

এবং, গুম করে ফেলুন মিটিমিটি তারার দল—

ওরা কিনা দেখায় পথ ঘরবাড়িহারা পথিকদের!

এমনকি আমাদের এতিমেরা—যাদের বাবা ‘অদৃশ্যজন’

শুষে নিন তাদেরও হৃদয়, হে মহামহিম ঈশ্বর

ক্ষমা চাইবেন না, যদি কেউ বলে আপনি জালেম

বেজার হবেন না, যদি আপনাকে বলে আগ্রাসী

আপনিই তিনি, যিনি মুক্ত করে দিয়েছেন পশুর দল

আর দিয়েছেন আব্রাহামের বংশকে মুহাম্মদের ভূমি

আপনিই কি তিনি, যিনি হত্যা করেছেন বসন্তকে?

তাহলে দাউদাউ করে উঠবে ক্রোধ

নিভবে না ইনকিলাবের অগ্নি।

আপনিই কি তিনি, যাঁর হাত খুবলে নিয়েছে আমার

পুষ্পোদ্যান আর উজাড় করে দিয়েছে

রক্তাভ বাদাম তোলার মওসুম?

আপনিই কি তিনি, মিথ্যে দেবতাকে যিনি

ইমাম বানিয়েছেন নামাজের

তারা নিজেরাই দাস, কেঁদে কী হবে অপর দাসের

জন্যে মুক্তির মুনাজাতে?

এবং, আপনি কি চেয়েছেন আমি হই

বাজারে বেচা অতঃপর কেনা, আবার বেচা গোলাম?

আপনিই কি আমায় দিয়েছেন নৈরাশ্যবাদ

ঠেলে দিয়েছেন আমার ভবিষ্যৎ কোনো বেনামি কৃষ্ণগহ্বরে?

রেগে যাবেন না, কারণ এসব কথার কোনো মুখ নাই

ভয় পাবেন না, কারণ এসব কথার কোনো হাত নাই

আমি তো নামঠিকানাহীন অদৃশ্যজন

আমার কিছুই নাই হারাবার

তবে, আমি যদি আপনার হাতে থাকা রুটি খাবলে ধরি

তাহলে অদৃশ্য আমার একটি জিনিসই

আপনার আঙুলের ডগায় পাবেন—

আমার শরীরে বয়ে চলা রক্তস্রোত

——————

ফিলিস্তিনি শহীদগণ, যাঁরা ঘুরে বেড়ায় মৃতদের দেশে

মূল : ফয়েজ আহমদ ফয়েজ

আমি যেখানেই গিয়েছি, ও আমার দেশের মাটি

তোমার অবমাননার ক্ষতের জ্বলন হৃদয়ে নিয়ে

তোমার সম্মানের প্রদীপদানি অন্তরে ধরে

তোমার ভালোবাসা,

তোমার যন্ত্রনাময় স্মৃতি সঙ্গী বানিয়ে, আমি গিয়েছি।

তোমার কমলালেবুর খুশবু আমার সঙ্গে গিয়েছে।

ছিল না-দেখা সব বন্ধুর সমর্থন

কত বন্ধুর আলিঙ্গনে বাঁধা ছিল আমার হাত

দূর পরদেশের অচেনা পথে চলতে ফিরতে

অচিন নগরের নামনিশানাহীন রাস্তায়

যেখানেই খুলেছি আমার রক্তে ভেজা পতাকা

উড়িয়েছি সেখানেই পিতৃভূমি ফিলিস্তিনের ঝাণ্ডা

তোমার দুশমনি নাহয় ধ্বংস করেছে এক ফিলিস্তিন

আমার জখম দেখো কত ফিলিস্তিন করেছে আবাদ

(পূর্বপ্রকাশ : চিরায়ত ১ম সংখ্যা)
শেয়ার করুন