চিরায়ত

‘পড়ো পড়ো এবং পড়ো’

______

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত বর্তমান আরবি ভাষার বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক খলিল মাহমুদ আস সামেদি। প্রায় পনেরোটি বইয়ের জনক এই প্রবীণ কথাসাহিত্যিকের পাথরশিশু বিষয়ে একটি বই ‘ফিলিস্তিনের পাথরশিশু’ নামে বাঙলায় অনূদিত হয়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। তাই প্রতিপাদ্যের সাথে সম্পর্ক থাকায়—তার জন্ম, জীবন এবং লেখালেখি বিষয়ে একটি লিখিত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খুবাইব মাহমুদ। চিরায়তের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে পত্রস্থ হলো।
______

চিরায়ত : আপনার জন্ম কোথায়, কোন সালে ?
খলিল : ১৯৫৭ এর এক গ্রীষ্মে আমার জন্ম। ‘মুখাইয়ামুল ইয়ারমুক’ নামে ফিলিস্তিনিদের একটি শরনার্থীশিবিরে। যেটা রাজধানী দিমাশক থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
আমার জীবনে আমার পিতার বিরাট অবদান রয়েছে। বই পড়ার নেশা ছিলো তাঁর। নাসিরুদ্দিন আলবানির সাথে ছিলো তাঁর বিশেষ বন্ধুতা। আলবানির বসবাস ছিলো ওই শরনার্থীশিবিরেই, একটি বড়ো সড়ো বাড়িতে।
তার একটি সাপ্তাহিক মজলিসে আব্বু নিয়মিত যেতেন। সাথে আমিও। যদিও তখন আমি বেশ ছোট।

চিরায়ত : শৈশব কৈশোর কিভাবে কেটেছে?
খলিল : ক্রমবর্ধমান এই ঘিঞ্জি তাঁবুতেই আমি শৈশব কৈশোরের দুরন্ত সময়গুলো অতিবাহিত করেছি। ওখানেই প্রাথমিক মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করি।

চিরায়ত : এখন কোথায়, কী করেন?
খলিল : রিয়াদে থাকি। শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতা নিয়ে আছি।

চিরায়ত : পড়াশোনার গল্পটা শুনতে চাই!
খলিল : মুখাইয়ামুল ইয়ারমুকে—যেমন বলেছি—আমার প্রাথমিক পাঠ। এরপর দিমাশক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছি ১৯৮৩ তে। এর পূর্বে অবশ্য দারুল মুয়াল্লিমিন থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। সেটা ১৯৭৫ সালে।

চিরায়ত : প্রথম প্রকাশিত বই কোনটি?
খলিল : প্রথম বই—‘ফিতইয়ান অলাকিন রিজাল’।
গত শতাব্দির শেষার্ধে প্রকাশিত। মাকতাবাতুল আবিকান, রিয়াদ থেকে।

চিরায়ত : এ পর্যন্ত প্রকাশিত বই কী কী?
খলিল : ১. সিলসিলাতু ফিতইয়ান অলা কিন রিজাল (বিশ খণ্ডে)
২. সিলসিলাতু কাসাস মিনাত তারিখ (দশ খণ্ডে)
৩. সিলসিলাতু হিজারাতিল আতফাল (দশ খণ্ডে)
৪. আতফাল আবতাল
৫. সুওয়াল ও জাওয়াব আন ফিলাস্তিন।
৬. সুওয়াল ও জাওয়াব আনিয যাহাব।
৭. মাজমুআতু তাআল্লুমিল আরাবিয়াহ লি গাইরিন নাতিকিন।
৮. যিকরায়াত মিন মুখাইয়ামিল ইয়ারমুক।
৯. মুজামু শুআরাই ফিলাস্তিন।
১০. আনা আতাআল্লামু লাগাতি (দশ খণ্ডে)
১১. সালাহউদ্দিন ওয়া আসরাবুল হামাম।
১২. আতফাল হাওলার রাসুল।

চিরায়ত : এর মধ্যে আপনার প্রিয় কোনটি?
খলিল : ফিতইয়ান ওলাকিন আবতাল, কারণ লেখালেখিতে এটি আমার প্রথম কাজ।

চিরায়ত : কী লিখছেন এখন, সামনে কী লিখবেন?
খলিল : অনেকগুলো বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত। প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। এর মধ্য থেকে ‘ইশরুনা ইয়াওম ফি ইয়াবুস’ নামে একখানা উপন্যাস। আরেকটি আত-তালিম বিল লাআব। আর ইতিহাসের সাহসী কিশোরদের একটা গল্পসমগ্র।

চিরায়ত : কোন কিতাব বারবার পড়বেন?
খলিল : কিতাবুল্লাহ

চিরায়ত : প্রিয় লেখক কিম্বা কবির কথা বলুন?
খলিল : কবিদের তুলনায় লেখকদের প্রতিই আমার টান বেশি। আলি তানতাবি, আলি আহমাদ বাকসির এবং নাজিব কিলানি প্রিয়দের তালিকায়। কালেভদ্রে মুতানাব্বি আর আহমাদ মাতারের কবিতাও পড়ি।

চিরায়ত : কারো লেখা বা চিন্তা প্রভাবিত?
খলিল : আলি তানতাবি এবং আবদুর রহমান রাফাত পাশার গদ্যশৈলি টানে আমাকে।

চিরায়ত : সর্বাধিক বিক্রিত বই কোনটি আপনার?
খলিল : ‘যিকরায়াত মিন মুখাইয়ামিল ইয়ারমুক’ সর্বাধিক বিক্রিত এবং বহুল পঠিতও। ২০১১ থেকে এই যে সংকটাপন্ন, অনিশ্চিত, এবং অবহেলিত শরনার্থী জীবন যাপন করছি এই তাঁবুতে—এই ব্যাপরটা আমি দৃঢ়তার সাথে খোলাসা করার চেষ্টা করেছি এই বইয়ে।

চিরায়ত : পরিবারে কে কে আছে?
খলিল : দুই ছেলে, দুই মেয়ে—বিবাহিত দুজনেই।

চিরায়ত : ফিলিস্তিনকে মনে পড়ে? ফেরার আশা আছে কি!
খলিল : আহা, না। নাকাবার প্রায় বারো বছর পর আমার জন্ম। তাছাড়া সিরিয়া, লেবানন বা ইরাকে হিজরত করা কোনো ফিলিস্তিনিরই অনুমতি নেই ফিলিস্তিনে প্রবেশের।

চিরায়ত : কখনো গিয়েছেন ফিলিস্তিনে?
খলিল : না, যাইনি। আমার ছেলে আমর অবশ্য গিয়েছে নেদারল্যন্ডের নাগরিকত্ব নেবার পর। ওই সফরে প্রথমবার সে তার ফুফুকে দেখেছে। ফিলিস্তিনের বড়ো বড়ো শহরগুলো—কুদস, হাইফা, আক্কা, ইয়াফা—ঘুরে ঘুরে দেখেছে। মাসজিদুল আকসা এবং আমাদের বিধ্বস্ত গ্রাম ‘লুবিয়ার’ কিছু চমৎকার ছবিও ক্যামেরাবন্দি করেছে।

চিরায়ত : পূরণ হয়নি এমন স্বপ্ন?
খলিল : ফিলিস্তিনে ফেরা।

চিরায়ত : শিশুসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ কারা বলে মনে করেন?
খলিল : এ ব্যাপারে প্রচুর কথাবার্তা। আমাদের আরবে কামেল কিলানি, মুহাম্মাদ আল হাওয়ারি, মুহাম্মাদ আল আরিয়ান, আবদুত তাওয়াব ইউসুফ, তারেক আল বাকরি, মুহাম্মাদ জামাল আমরসহ আরো অনেকে। আর হিন্দুস্থানে আছেন—আবুল হাসান আলি নদবি।

চিরায়ত : যারা লিখতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
খলিল : শুধু বলব—‘পড়ো পড়ো এবং পড়ো।’

চিরায়ত : আমাদের জানামতে আপনি রাবেতায়ে আদাবিল ইসলামি আলামির একজন সদস্য—এই ব্যাপারে কিছু বলুন।
খলিল : রাবেতার ম্যাগাজিনে আমার বেশকিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। অনেকগুলো আলোচনাসভায়ও আমি অংশগ্রহণের করেছি। এখন অবশ্য ডোনেশান এবং উদ্যমহীনতার কারণে এর পড়তি অবস্থা। এমনকি ম্যাগাজিনটা প্রিন্টও হয় না, অনলাইনে সীমাবদ্ধ।

চিরায়ত : হিন্দুস্তানের কাদের লেখার পড়েন?
খলিল : আলি নদভির অধিকাংশ বই-ই আমি পড়েছি।
আরবি অনুবাদে আল্লামা ইকবালের কিছু কবিতাও পড়া হয়েছে আর আবুল আলা মওদুদির কিছু এবং ইদরিস কান্ধলবির হায়াতুস সাহাবাহ। হিন্দুস্থানের কিছু সাময়িকীর ব্যাপারেও আমার জানাশোনা আছে।
যেমন—আল আদাবুল ইসলামি, আল বায়ান, আর রায়েদ, ইত্যাদি।

চিরায়ত : জীবনের শেষ ইচ্ছে কি?
খলিল : মসজিদুল আকসায় স্বাধীনভাবে নামাজ আদায় করা। জায়নিস্টদের প্রহরায় ভ্রমণকারী হিসাবে নয়।

চিরায়ত : অনেক অনেক শুকরিয়া আপনাকে।
খলিল : তোমাদেরকেও। এবং বিশ্বের যে কোন জায়গায় বিশেষত বাংলাদেশে যারা আরবি ভাষাকে ভালোবাসে—তাদেরকেও শুকরিয়া।

শেয়ার করুন