চিরায়ত

নিযার কাব্বানির একগুচ্ছ কবিতা

নিষার কাব্বানি। বিধ্বস্ত বিপন্ন সিরিয়ার জাতীয় কবি। পাথরশিশু বিষয়ে তার জনপ্রিয় একগুচ্ছ কবিতা মূল আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন নাবিল নিবরাস।

এক.

পৃথিবীকে ওরা করেছে আলোকিত

মোমের আলোয়

বিভাষিত করেছে দারুণ

ওদের আগমন এক মোহন সুসংবাদ যেনো

ঝাঁপিয়ে

কাঁপিয়ে

লাফিয়ে

ওরা করেছে বরণ

শাহাদাতের অমৃত সুধা।

আমরা তো রয়েছি পড়ে

চৌপেয়ে পশুর মতো

নিশ্চল, নিস্তেজ

দুই.

শাহাদাত অবধি

ওরা আমাদের হয়ে

করেছে লড়াই

আমরা আজও বেঘোর বুঁদ

গলির কফিআড্ডায়

জমে থাকে মাণিক্য যেমন

ঝিনুকের বুকের ভেতর

আমাদের কেউ

উঁবু হয়ে বসে তার ব্যবসার খাতায়

কোটি টাকার ধান্ধায়

কেউ

চতুর্থ স্ত্রীর উঞ্চতা আর

দেহের কোমল আদরে উন্মুখ

কেউ

লন্ডনে চায় তার সুরম্য প্রাসাদ এক

কেউ

করে অস্ত্রের নগ্ন দালালি

আর ধ্বংসস্তুপে খোঁজে আগুন-বিপ্লব

কেউ

সিংহাসন, বাহিনী, আর

রাজত্বের গোপন অভিলাষে

ভুলে থাকে সব, সব কিছু

তিন.

শ্রমিকতা

লাম্পট্য ও

আবর্জনায়

বেড়ে উঠা প্রজন্ম হে!

থেমে গেলে ইতিহাস

দেখবে মরণচোখে

পাথরশিশু তোমাদের

করে দেবে দারুণ বিধ্বস্ত, বিরান

চার.

গাজার শিশু হে!

বিস্মৃত আজ সবই, যা ছিলো একদিন

সুতরাং—

কিছু শিখিয়ে দাও আজ তোমাদের আহরিত বিদ্যা থেকে

শিখিয়ে দাও পুরুষ হতে

আমাদের পুরুষেরা জমাট খুব

বিলের কাদা মাটির মতো

শিখিয়ে দাও

শিশুদের হাতে পাথর

কিভাবে পরিণত হয়

দুর্মূল্যের হীরকখণ্ডে

কিভাবে শিশুর সাইকেল

বিস্ফোরক মাইনের শক্তি পায়

আর রেশমের ফিতা যেনো

গোপনে উঁৎ পেতে থাকে

শত্রুর আশায়

বন্দি দুধের শিশু

কিভাবে জ্বলে ওঠে

ধারালো ছুরির মতো

শিখিয়ে দাও এসব আমাদের।

পাঁচ.

এড়িয়ে যাও আামদের এই সম্প্রচার

শুনো না কোনো উপদেশ আর

সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো

আঘাত করো, বিধ্বস্ত করে দাও

ওদের অবস্থান

নিজেদের সিদ্ধান্তে থাকো অবিচল

জানতে চেয়ো না আজ কিছু আমাদের কাছে

আমরা তো ডুবে আছি খুব

যোগ বিয়োগ আর গণিতের গোলকধাঁধায়

তোমরা বরং মেতে থাকো যুদ্ধে, তুমুল যুদ্ধে

কিছুমাত্র পরোয়া করো না আমাদের বয়ান, বিভ্রাট

আমরা কাপুরুষেরা পালিয়ে এসেছি

তোমাদের কাছ থেকে

গাজার শিশু!

এসো,

রশি নিয়ে এসো

ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলো

আমাদের মতো যতো কাপুরষ!

ছয়.

কেমন মৃত হয়ে পড়ে আছি সবাই

সমাধীহীন—এখানে সেখানে ইতস্তত

এমন এতিম যেনো

যার নেই দেখার ক’টা চোখ!

গুটিয়ে থাকাই যেনো ভূমা আমাদের

আর পরম চাওয়া—তোমরা শিশুরা

করবে লড়াই দানবের সাথে খুব!

তোমাদের সামনে হে পাথরশিশুরা

শতাব্দী বছর হয়ে গেছি ছোট, খুব ছোট সবাই

তোমরা যেনবা পেরিয়েছো জীবনের

শতাব্দীকাল, অভিজ্ঞতার হাজার বছর যেনো!

সাত.

গাজার শিশু হে!

লাভ নেই পড়ে

আমাদের এসব নিষ্প্রাণ লেখাজোকা

পূর্বসুরী বলে

খোঁজো না সাদৃশ্য আমাদের

প্রণম্য সবাই

তবে করো না প্রণাম আজ

আমাদের আছে শুধু

রাজনীতির মৃদু বোলচাল

আর

গড়ে তোলা চৌপাশে

কবর কারাগার

আট.

মুক্ত করো আমাদের

ভয়ের নীল চোখ থেকে

ভেঙে ফেলো আফিমের বাটি,

মদের বোতল সব!

অটলতার শাস্ত্র শিখিয়ে দাও

আমাদের আজ

ফেলে রেখো না ঈসা কে

দুঃখের ভূমিতে হে পাথরশিশু!

ছোটবন্ধু!

সালাম নাও!

জুঁই ফুলের ঘ্রাণে ঘ্রাণে

ভরে দিন প্রভু তোমাদের দিবস-রজনী

বিধ্বস্ত ভূমির ছড়ানো টুকরো থেকে

উদিত হয়েছো সবাই

আমাদের জখমে ফলিয়েছো

গুচ্ছ গুচ্ছ নার্গিস ফুল

যা বলছি এসব!

সবই

কাগজ-কালির নরোম বিপ্লব

তোমরা বরং পরিণত হও

সুষম সুরে মানুষের মুখে মুখে

(পূর্বপ্রকাশ : চিরায়ত ১ম সংখ্যা)
শেয়ার করুন