শিশুর কথা উঠলেই জান্নাতি ফুল চোখের তারায় ভেসে ওঠে। যে হাসতে জানে, হাসাতে জানে। প্রতিটি অঙ্গ-ভঙ্গি দিয়ে কঠিন হৃদয়কে করে দিতে পারে ফুলের মতো কোমল। একটি হাসি ফুটাতে জীবনের সবসুখ সপেঁ দিতে পারে প্রতিটি হৃদয়বান মানুষ। যার নজীর বা উপমা আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কাছ থেকে অনেক প্রমাণিত। তিনি বাচ্চাদের দেখলে কোলে তুলে নিতেন। হাসি মুখে কথা বলতেন। একবারের ঘটনা। নবীজি আবু তালহার ঘরে তাশরিফ আনলেন, দেখতে পেলেন তার বালক ছেলে আবু উমায়ের গালে হাত দিয়ে বিষণ্ণ মনে বসে আছে। তার পালিত ছোট্ট পাখিটি মারা যাওয়ায় চোখ দিয়ে দরদর অবিরাম অশ্রু ঝরছে। তিনি তার মুখে হাসি ফুটাতে ভঙ্গি করে বললেন ‘ইয়া আবা উমায়ের! মা ফাআলা নুগাইর’। হে আবু উমায়ের তোমার নুগাইর (ছোটপাখি) করলোটা কী? তা শোনে উমায়ের ফিক করে হেসে দিলো।
পরিবেশ সে-সকল তাজা ফুলের মতো কোমলমতি শিশুদেরকে পাল্টে দেয়। বাবা-মা ও প্রিয় জনের খুন রাঙা জামা দেখে তারা হাসতে ভুলে যায়। হাসি নামক সুন্দর ও প্রাণবন্ত বন্ধুকে তারা হারিয়ে ফেলে কঠিনতম পাথরের নিচে। তাদের ভেতরের ফুলের স্নিগ্ধতা দূর হয়ে যায়। সেখানে জন্য নেয় বারুদের মত তেজ এবং লৌহের মতো শক্ত প্রত্যয়। তারা বেছে নেয় রক্ত-ঝরানো খুন রাঙাপথ।
প্রিয় নবীকে কুটুক্তি ও কষ্ট দেয়ার কথা শোনে, মুআয ও মুয়াওয়ায জেগে উঠছিল। দেখিয়ে দিয়েছিল শিশুরাও পারে প্রতিশোধ নিতে। পারে বড় বড় হাস্তিকে বালু ও রক্তের মাঝে গড়াগড়ি খাওয়াতে। সে সূত্র ধরে চৌদ্দশত বছর পরেও ফিলিস্তিনের শিশুরা থেমে নেই। তারা মুআয ও মুয়াওয়াযের মতো প্রতিনিয়ত জ্বলে উঠে। অস্ত্র নেই বলে বসে থাকে না। পাথর নিয়ে ট্যাংকের মুকাবেলায় বুক উচিয়ে দখলদার জায়নাবাদী ইহুদিদের তাড়া করে ফিরছে। কোমলমতি এ ছোট্ট শিশুদের হিম্মত আর বাহাদুরী দেখে অস্ত্রধারীরা পালাচ্ছে। কাছে না এসে বোমারু বিমান দিয়ে নির্বিচারে বোমা ফেলে জীবন ও সম্পদ সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে শত শত শিশুকে বন্দি করে কারাগারে আটকে রাখছে। এ শিশুদের মাঝে খালেদ বিন ওয়ালিদ ও গাজি সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর প্রতিচ্ছবি দেখে ওরা রীতমত ভড়কে যায়। নির্মম নির্যাতনে পঙ্গু করে দেয় শিশুদের। তবুও ওদের থামাতে পারে নি। ওরা তো শুধু পাথর শিশু না বরং আল্লাহর আবাবিল।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রাচীন শহর হেরবনে একটি দোকানে ঢুকে নিরাপরাধ এক শিশুর চোখে গুলি করে তাকে অন্ধ করে দিয়েছে যায়নাবাদী ইহুদীরা। শিশুটির নাম ইজ্জ আল-দিনা নাদাল বাতাশ। বাতাশের বাবা আব্দুল করিম বলেন, ইসরাইলের একদল সেনা হেরবনে টহল দেয়ার সময় শিশুদের আটক করতে চেয়েছিল। নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে তারা পাথর নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। উত্তেজিত সেনারা কাউকে ধরতে না পেরে মার্কেটে ঢুকে বাতাশের চোখে গুলি করে। অথচ তার কোন অপরাধ ছিল না। জীবনের জন্য তাকে অন্ধ করে দেয়া হয়।
এমনিভাবে মালিক ইসা নামের আরেক ফিলিস্তিন শিশুকে গুলি করে অন্ধ করে দেয়া হয়। স্কুল থেকে তিন বোন আসার সময় এ মেয়ে শিশুকে এ আঘাত দেয়। ওরা প্রতিনিয়ত শিশুদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালাই। আর শিশুরা ভড়কে না গিয়ে বুক উচিয়ে নারায়ে তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলে। সুযোগ পেলে ইহুদীদের ধমকিয়ে দেয়। চপেটাঘাত করে। সবার সম্মুখে হাস্যকর পাত্র বানিয়ে ছাড়ে। হিম্মতের বুলি না উড়িয়ে কখনো বুলেট-গুলি, ট্যাংকের সামনে দাড়িয়ে পাথর ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেয়। খোদার শত্রুদের যে জাতির শিশুরা এমন সাহসী ও মুক্তিকামী হবে, তারা অচিরেই স্বদেশের বুকে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করবে, ইনশাআল্লাহ।